বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বান্ধবীর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় এক যুবককে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত যুবক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চাতরা গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে মিজান আলী তুহিন (২৬)। রায় ঘোষণার পর রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে ডি‌জিটাল নিরাপত্তা আইনে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। মামলার বাদী ও আসামির বাড়ি একই জেলার পাশাপাশি গ্রামে। আর তারা দুজনই রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্ধু ছিল। কলেজে পড়াশোনা করার সময় তাদের মধ্যে একপর্যায়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ওই সময় তুহিন মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগী নারীর কিছু স্থির ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরে তুহিন তার বান্ধবীকে বিয়ের জন্য চাপ দেন এবং তাকে বিয়ে না করলে এসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেন।

কিন্তু ওই তরুণী তাকে বিয়ে করতে রাজি হননি। এরপর ওই তরুণীর পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। আর বিয়ের পর থেকে অভিযুক্ত যুবক বাদীর সম্পর্কে তার স্বামী এবং শাশুড়ির মোবাইল ফোনে বিভিন্ন আপত্তিকর এসএমএস, ছবি এবং ভিডিও পাঠাতে শুরু করে। একপর্যায়ে ফেসবুকে ‘শেষের কবিতা’ নামে একটি প্রোফাইল খুলে সেখানে ওইসব আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করে তুহিন। এ ঘটনায় তুহিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী।

অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বেগম আরও বলেন, ওই মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে বুধবার আদালতের বিচারক অভিযুক্ত তুহিনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তুহিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫ (২) ধারায় তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই আইনের ২৬ (২) ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া ২৯ (২) ধারায় এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং আরও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। পৃথক ধারায় দেওয়া এই সাজাগুলো একটার পর অন্যটা কার্যকর হবে। আর এ মামলায় গ্রেপ্তারের পর আসামি হাজতবাসে থাকলে তা মূল কারাদণ্ড হতে বাদ যাবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।